বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি, কালের খবর :
আমতলীতে যৌতুকের চাবুকে ক্ষত-বিক্ষত মার্জিয়া । যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রী মার্জিয়া বেগমকে (১৯) বেধড়ক মারধর করে স্বামী আবুল হোসেন রাস্তায় ফেলে রেখে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গোজখালী গ্রামে রবিবার সন্ধ্যায়। এ ঘটনায় সোমবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. হুমায়ূন কবির তিন আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
মামলার বিররন সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার গোজখালী গ্রামের মোতালেব দফাদারের মেয়ে মার্জিয়া বেগমকে কুকুয়া ইউনিয়নের খাকদান গ্রামের সেকান্দার সিকদারের ছেলে আবুল হোসেন সিকদারের সাথে ২০১৭ সালে ৫ এপ্রিল বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় স্বর্নালংকারসহ ২ লক্ষ টাকা উপহার সামগ্রী দিয়ে তুলে দেয়। বিয়ের কিছু দিন যাওয়ার পরেই স্বামী আবুল হোসেন স্ত্রী মার্জিয়া বেগমকে ব্যবসা করার জন্য বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে বলে। মার্জিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, যৌতুকের টাকা বাবার বাড়ী থেকে এনে না দিলেই স্বামী আবুল হোসেন, শ্বশুর সেকান্দার সিকদার, শাশুড়ি জাহানারা বেগম ও দেবর আবুল কালাম শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করে।
শুক্রবার ব্যবসা করবে বলে মার্জিয়াকে বাবার বাড়ী থেকে ২ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে স্বামী আবুল হোসেন। শনিবার স্বামী আবুল হোসেন স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ী যায় এবং ব্যবসা করার জন্য ২ লক্ষ টাকা দাবী করে। কিন্তু গরিব শ্বশুর মোতালেব দফাদার জামাতার চাহিদামত যৌতুক দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জামাতা আবুল হোসেন শ্বশুর বাড়ীতে স্ত্রী মার্জিয়াকে রেখে চলে যায়।
এ সময় স্ত্রী মার্জিয়া স্বামীর পেছনে পেছনে ছুটে চলে। শ্বশুর বাড়ী থেকে আধা কিলোমিটার গেলে আবুল হোসেন স্ত্রী মার্জিয়াকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় সড়কে ফেলে রেখে যায়। স্বজনরা খবর পেয়ে মার্জিয়াকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় সোমবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মার্জিয়া বাদী হয়ে স্বামী আবুল হোসেনকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে। আদালতের বিচারক মোঃ হুমায়ূন কবির প্রধান আসামীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখাগেছে, মার্জিয়ার সারা শরীরে রক্তাক্ত ফুলা জখমের চিহৃ রয়েছে। শরীরের অসহনীয় যন্ত্রনায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মার্জিয়ার গলা,বাম বাহু, রান, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখমের চিহৃ রয়েছে।
আহত মার্জিয়া কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, বিয়ের এক বছরে যৌতুকের জন্য স্বামী,শ্বশুর, শাশুড়ীসহ পরিবারের লোকজন শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করে আসছে। যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বাদী পক্ষের আইনজীবি আলহাজ নুরুল ইসলাম বলেন, আদালতের বিচারক মো. হুমায়ূন কবির মামলাটি আমলে নিয়ে প্রধান আসামী আবুল হোসেনসহ তিন জনকে আগামী ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কালের খবর -/০২/০৪ /১৮